বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন তিন বাহিনী প্রধান বাংলাদেশ প্রতিবেশীসহ সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক আলোচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত ঝালকাঠির রাজাপুরে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে মামলা দিতে থানায় গেলে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ কলাপাড়ায় পৌর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সমাবেশ কলাপাড়ায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ বিজয়ীদের সনদপত্র ও পুরস্কার বিতরণ কলাপাড়ায় পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সমাবেশ কলাপাড়ায় নানা আয়োজনে বিশ্ব শিশু দিবস পালিত পটুয়াখালীতে (অবঃ) পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে থানায় জমি দখলেরঅভিযোগ জিয়া মঞ্চ বাবুগঞ্জ উপজেলার কর্মী সভা অনুষ্ঠিত গলাচিপায় খাদিজা হত্যার পলাতক আসামি গ্রেফতার কলাপাড়ায় মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপি’র কোষাধ্যক্ষ বাউফলে ইউএনও’র” অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ বরিশালের বাবুগঞ্জে ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড যত দ্রুত সম্ভব বর্তমান সরকার একটি নির্বাচন দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করবে-” মেজর (অব.) হাফিজ
এমন নববর্ষ দু:স্বপ্নেও ভাবিনি

এমন নববর্ষ দু:স্বপ্নেও ভাবিনি

Sharing is caring!

তন্ময় তপু: দু:স্বপ্নেও ভাবিনি এমন নববর্ষ জীবনে আসবে। করোনা পরিস্থিতি আসার অনেক আগে থেকেই এবার নববর্ষ একটু অন্যভাবে ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করার প্লান ছিলো। কিন্তু কে জানতো এমন কপাল খারাপ সময়ে এবারের নববর্ষ জীবন বাঁচানোর যুদ্ধে হারিয়ে যাবে। নববর্ষের গল্প বলতে গেলেও জীবন থেকে একটি বছরকে বাদ দিয়েই বলতে হবে। আর এবারের নববর্ষের কারণে সেই ছোট গল্প উপন্যাসে রুপ নেবে। কত আতংক আর জীবন বাঁচানোর যুদ্ধের কথা। যে যুদ্ধে শত্রুকে চোখে দেখা যায় না। গল্প বলা তো পরে থাক বর্তমান পরিস্থিতি দিয়ে বাঁচানোর চিন্তায় মনেই ছিলো না চৈত্র সংক্রান্তি, নীল পূজা আর নববর্ষের কথা।

এই বিষয়েই কথা হচ্ছিলো বাংলা নিউজের মুশফিক সৌরভের সাথে। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষে কতই না আয়োজন। সিটি কলেজ আর বিএম স্কুলে তো চারুকলা এবং উদীচির অদৃশ্য প্রতিযোগিতা চলে। কারা কত আকর্ষনীয় হাতি, ঘোড়া, ময়ূর, কুমিড় বানাতে পারে। এবারের নববর্ষে পাঞ্জাবীও পরা হবে না। দেখা হবে না রঙিন দুই মঙ্গল শোভাযাত্রা। কাল চৈত্র সংক্রান্তির দিনে যেখানে প্রতিবছর শতশত লোকের আনাগোনা থাকে মন্দিরে। গঙ্গা পূজা দিয়ে থাকে হিন্দু নারীরা। সেখানে এ বছর তেমন কাউকেই চোখে পরেনি।

রাতে অফিস থেকে বাসায় আসার পথে সিটি কলেজ, বিএম স্কুল আর বিএম কলেজের সামনে কিছু সময় দাড়িয়েছিলাম। নেই আয়োজন, নেই মেলা, নেই উচ্ছ্বাস নেই আনন্দ আর উৎফুল্লতা। এবারে আর আগের দিন রাতে আঁকা হয়নি বিএম কলেজ জুড়ে আলপনা, প্লান করা হয়নি যে কখন কয়টায় কোথায় থাকবো। অবশ্য এটা সৌরভ ভাই করে থাকে। কিন্তু করোনা থেকে বাঁচতে তার প্লানও হারিয়ে গেছে মঙ্গল শোভাযাত্রাগুলোর সাথে।

আমাদের ভবিষ্যৎ বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাঈদ পান্থ ভাইর সাথে কাল আলাপ করছিলাম নববর্ষে কবে সেটা নিয়ে। কেননা বিগত বছরগুলোতে তাকে অফিসে আটকে রাখা সম্ভব হয়নি কোনোভাবে। অফিসে থাকার থেকে তিনি চারুকলাতেই রাত দিন সময় কাটাতেন নববর্ষের আগের কয়েকটাদিন। এই কথা বলতে বলতে তিনিই বলে উঠলেন তার চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠান থাকার কথা ছিলো অশ্বিনী কুমার হলের সামনে। এখন তো সেই প্রোগ্রামেই থাকার কথা। কিন্তু নববর্ষ কবে সেটাই ভুলে গেলাম।

বরিশালে গতবার সব থেকে লোকের সমাগম বিএম কলেজে হয়েছিলো। ১ মাস আগে থেকে গানে আর আড্ডায় জমে উঠেছিলো বর্ষ বরণের আয়োজন। জীবনানন্দ ক্যাফেটেরিয়া সমানে চলেছে কাজ। সাথে ছিলো গানের আয়োজন। অবশ্য এই আয়োজনটার থিম পুরোটাই ছিলো আব্দুল্লাহ মাহফুজ অভি ভাইয়ের। আর যাতে সহযোগিতা করে কলেজের শিক্ষার্থীরা। পুরো বিষয়টিকে নিয়ে হেলা ফেলা অনেকে মনে করলেও আয়োজনটা ছিলো জমকালো। এবারেও তেমনই আয়োজনের কথা ছিলো। কিন্তু চীন থেকে উদ্ভুত এক ভাইরাস একটি জাতির বছর শেষে ঐতিহ্য’র দিনকেই ধুলিস্যাৎ করে দিলো।

করোনার প্রাদুর্ভাব বেরে যাওয়ার পর আমার বন্ধু রাসেল হোসেনের (বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির দপ্তর সম্পাদক) দেখা মেলেনি। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই তাকে পাওয়া যায়। নববর্ষের আগের কয়েকটা দিন ওর জ্বালায়ই থাকতে হতো। বিষয়বস্তু ছিলো পাঞ্জাবী পরা নিয়ে। কিন্তু এবার নববর্ষে রাসেলকেই পাওয়া যাচ্ছে না। কেননা রাসেল রয়েছে তার নিজ ঘরে। বাসা থেকে বেরও হয় না, করোনার ভয়ে ফোন দিয়ে খোজ খবরও নেয় না। এমন নববর্ষ আশা করেনি রাসেল, যেখানে আমি, সৌরভ ভাই, বাপ্পি দা, রাসেল সহ অনেকের একসঙ্গে উপস্থিতি হাসি ঠাট্রা আর আড্ডাবাজি থাকবে না। টেনশন করিস না রাসেল, আসছে বছর আবার হবে। সামনের বার সৌরভ ভাইর টাকায় কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়ার প্লান কর। কেননা আমার আবার পান্তা ইলিশে পোষায় না।

এবারে আর নববর্ষের নিউজ পাঠানোর জন্য তাগিদ দেবে না যুগান্তরের ব্যুরো প্রধান আকতার ফারুক শাহিন ভাই। স্ক্রিপ্ট লিখতে বসবে না আলী জসিম মামা (আরটিভি)। তবে বিশেষ একটা দু:খের বিষয় এবারে টেলিভিশন সাংবাদিকদের ব্যস্ততা চোখে পরবে না। লাইভ আর ভক্সপপের জন্য ছোটাছুটি করবে না ফিরদাউস সোহাগ (সময় টিভি), রাহাত খান (নিউজ ২৪), বিধান সরকার (৭১ টিভি), কাওছার হোসেন রানা (চ্যানেল ২৪), অপূর্ব অপু (ডিবিসি নিউজ), কাওছার হোসেন (যমুনা টিভি) ভাই সহ অনেকেই। ব্যস্ত এই মানুষগুলোও বর্তমানে যতটা পারেন বাইরে কমই বের হন। নববর্ষের আমেজ করোনা মহামারির স্রোতে তাদের কাছেও আসতে পারেনি। এবারে ব্যস্ততা তাদের আর ছুঁতে পারেনি। মানতে পারেনি এমন নববর্ষের চিত্রও। আমাদের শাহীন হাফিজ ভাই (ইত্তেফাক) ঘরে ঢুকেছেন অনেক আগেই। ভুলে গেছেন যে তারও পাশ কাটিয়ে চলে গেছে বাংলা নববর্ষ। শামীম মামার ব্যস্ততায় এবার স্থবির অবস্থায় থাকবে। এবারে আর সৌরভ ভাইও নববর্ষ উপলক্ষে সাইড স্টোরি খুজতে মরিয়া হয়ে উঠবে না। সৈয়দ মেহেদি হাসান ফেসবুকে সরব।  ডেইলি স্টারের ফটোগ্রাফার নাজির মহল্লাবাসী টিটু দাস রাতে ফোন করে বললো পহেলা বৈশাখে কি করবি? উত্তরটা দিতে পারিনি। কেননা ছোটবেলা থেকে এই উৎসবটি পালনে কোনোভাবেই গাফলতি করতাম না। কিন্তু একটা ভাইরাস সেই উৎসব আটকে দিলো। যাকে চোখে দেখা যায় না, ছোয়া যায় না। অদৃশ্য ছোবলে পন্ড করে দিয়েছে সব। স্থবির করে দিয়েছে পৃথিবীকে।

এমন নববর্ষ দু:স্বপ্নেও ভাবিনি যেখানে বরিশাল নগরীকে ঘুরে দেখতে পারবো না। মানুষের স্রোত দেখবো না, পারবো না বন্ধু, সিনিয়র-জুনিয়রদের সাথে আড্ডা দিতে। এটা কি কেউ স্বপ্নেও ভেবেছিলো। সবশেষে হিউম্যান ইজ জিরো, ভাইরাস ইজ হিরো। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা মানুষকে এই ভাইরাস থেকে মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবন দ্রুত দান করুক।

যে ভাইরাস এসেছে তাতে কখন কে পরলোকগমন করেন তা শুধু মাত্র বিধাতাই জানে। তাই নববর্ষ বারবার আসবে, জীবন একটাই। বাঁচলে নববর্ষ পরের বছর উপভোগ করবেন। তাই বাঁচতে হলে ঘরে থাকুন, পরিবারের সাথে সময় কাটান। অদৃশ্য কিছুর সাথে সাথে যুদ্ধ সম্ভব নয়, তাই আমরা পরাজিত।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD